কক্সবাজারে ডেঙ্গুর ভয়ে আতঙ্কে মানুষ: সনাক্ত ৩৬ জন হাসপাতালে ভর্তি ২৪ জন

সাইফুল ইসলাম, কক্সবাজার জার্নাল

কক্সবাজারে ডেঙ্গু রোগির সংখ্যা ক্রমাগত বাড়তে শুরু করেছে। এতে প্রতিনিয়নেতই ভয়ের মধ্যে রয়েছে মানুষ। কোন ভাবেই ঠেকানো যাচ্ছেনা এর বিস্তার। এভাবেই ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে থাকলে ঢাকার মতো কক্সবাজারেও ডেঙ্গু রোগির ভয়াবহ আকার ধারণ করার সম্ভাবনা রয়েছে। এই ডেঙ্গু নিধনের জন্য গত কয়েকদিন কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও পৌরসভা কর্তৃক অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।

২ আগষ্ট (শুক্রবার) বিকেল পর্যন্ত কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে মোট ২৩ জন এবং ডেঙ্গু রোগি সনাক্ত করা হয়েছে ৩৩ জন। চকরিয়া উপজেলা ডেঙ্গু রোগি সনাক্ত করা হয়েছে ৩ জন এরমধ্যে ভর্তি হয়েছে একজন। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা: মহি উদ্দীন ও চকরিয়া জমজম হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম কবির।

এতদিন শুধুমাত্র কক্সবাজার জেলার বাইরের জেলা থেকে ডেঙ্গু জীবানু বহন করে আসা রোগি কক্সবাজারের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হলেও কক্সবাজার ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগির সংখ্যা পাওয়া যায়নি। এখন দেখি কক্সবাজারেও ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগির সংখ্যা। এদের মধ্যে কক্সবাজারে স্থানীয়ভাবে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছে ৮ জন। অর্থাৎ চকরিয়া ৩ জন-সহ মোট ১১ জন। তারা কোন জেলায় না গিয়ে স্থানীয়ভাবে কক্সবাজারে ডেঙ্গু জীবানুতে আক্রান্ত হয়েছে।

তার মধ্যে সদরে ৩ জন, উখিয়ায় ১জন, রামুতে ২ জন, টেকনাফে ১ জন মহেশখালীতে ১ জন ও চকরিয়া ৩ জন। বাকী ২৫ জনের মধ্যে অনেকে কক্সবাজার জেলার বাসিন্দা হলেও তারা বাইরের জেলা থেকে ডেঙ্গু জীবানু শরীরে বহন করে কক্সবাজার এসেছেন। এখনও কক্সবাজার কুতুবদিয়াতে ডেঙ্গু জীবানু আক্রান্ত পাওয়া যায়নি।

কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে ডেঙ্গুর টিম গঠন করা ছাড়াও মহিলা এবং পুরুষ রোগীর জন্য আলাদা কর্ণার স্থাপন করা হয়েছে। ভর্তিকৃত রোগীদের নিবিড় পরিচর্যায় রাখা হয়েছে। সনাক্ত করা ও ভর্তিকৃতদের মধ্যে স্থানীয়ভাবে আক্রান্ত হয়েছে ১১ জন। নিশ্চিত করেছেন জেলা সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা: মহি উদ্দীন।

স্থানীয় সূত্র মতে, পাহাড়, সাগর ও নদীবেষ্টিত পরিবেশে কক্সবাজারে ম্যালেরিয়া জীবানুবাহী মশা বিস্তারের ইতিহাস আছে। কিন্তু এডিস মশার বংশ বিস্তারের পরিবেশ নেই বললেই চলে। ফলে এখানে কেউ ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ছিল না। এ অবস্থায় ঢাকা থেকে কক্সবাজারে আসা বিমান ও এসি, নন-এসি বাসে এডিস মশা কক্সবাজারে আসছে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের। বিশেষ করে দূরপাল্লার এসি বাসগুলোতে এডিস মশা সহজে বংশ বিস্তার করতে পারে।

কক্সবাজার সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. মহি উদ্দিন বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে হলে এডিস মশা নিধন জরুরি। দূরপাল্লার বাস কিংবা বিমানে এডিস মশা আসছে না- এটা অস্বীকার করা যাবে না। তাই বিমান বন্দর এবং বাস টার্মিনালে সতর্কতা জারি করা প্রয়োজন। তবে কক্সবাজারে পাওয়া ডেঙ্গু রোগীরা ঢাকা বা বাইরের জেলা থেকে রোগ বহন করে নিয়ে এসেছেন।

বিশেষজ্ঞদের অভিমত, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কক্সবাজারে আসা এসি ও নন-এসি বাস, পর্যটকদের সঙ্গে আনা বিলাসবহুল গাড়িগুলো কক্সবাজারে প্রবেশের সময়ই এবং ল্যান্ড করা বিমানবন্দরগুলোর পাশাপাশি পার্কিং এলাকা মশামুক্ত করা গেলে এডিস মশার ভয় কিছুটা কমবে।

কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, ইতোমধ্যে এডিস মশার বিস্তার ও রোধ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টিতে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। যেসব এলাকায় মশার উপদ্রব বেশি সেখানে স্প্রে অব্যাহত রয়েছে। ভীতি কাটিয়ে সেবা বাড়াতে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ, জেলা প্রশাসন একীভূত হয়ে কাজ করছে।